Custom Search

Saturday, May 3, 2014

বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের বিকল্প নেই- সেমিনারে ইতিহাসবিদেরা

দেশ বিভাগ বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বের মানুষের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন দুই দেশের ইতিহাসবিদেরা। তবু এখনো একই হিমালয় পর্বতমালা থেকে দুই দেশের মানুষ পানি পায়। এই এলাকার মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্যের ঐতিহ্য প্রায় এক। তাই দুই দেশের বন্ধুত্বের কোনো বিকল্প নেই।
'১৯৭১: বাংলাদেশ এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত: স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত্' শীর্ষক আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে আজ শনিবার বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাসবিদেরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী বাংলা একাডেমিতে দুই দিনব্যাপী এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক ও গবেষক ছাড়াও সেমিনারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নিচ্ছেন। সকালে উদ্বোধনী অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ১৯৭১ সালে ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্ব একই অধিবেশনে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন বলেন, দ্বন্দ্ব হচ্ছে অনুন্নয়নের চিহ্ন। অতীতে দেখা গেছে, এক দেশের দুর্বলতাকে অন্য দেশ পুঁজি করে লাভবান হতে চাইছে। আসলে দরকার, প্রতিবেশী দেশের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে উন্নতি করার মানসিকতা। সেমিনারের প্রথম কর্ম-অধিবেশনে ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহাদেব চক্রবর্তী বলেন, ১৯৭১ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৫৬ হাজার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে সমান সংখ্যক শরণার্থী ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয়। এ রকম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই। তিনি বলেন, পাকিস্তান বাহিনী চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ধ্বংস করার পর আগরতলার অন্তত তিনটি স্থান থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিল। ত্রিপুরার ৩৮টি কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের চিকিত্সাসেবা দেওয়া হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিল্লির অনুমতি ছাড়া একা ত্রিপুরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মানবতার কারণেই পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে একাত্ম হয়েছিলেন। ত্রিপুরায় আহমদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে কবর দিয়েছিলেন। এ রকম বহু সাধারণ মানুষের অবদানের কথা ইতিহাসে গুরুত্ব পায়নি। মেঘালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড ফরেন ল্যাংগুয়েজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৈলাস এস বড়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিকেলের অধিবেশনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ভারতের ভিসা পেতে বাংলাদেশের মানুষকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। কাল সমাপ্তি অধিবেশন ছাড়াও পৃথক দুটি কর্ম-অধিবেশনের মধ্য দিয়ে এই সেমিনার শেষ হবে।

No comments: