Custom Search

Thursday, May 1, 2014

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফায় ভোট- ব্যাপক বুথ দখল ও সহিংসতা by রজত রায় from কলকাতা @প্রথম আলো

ব্যাপকভাবে বুথ দখল ও হিংসাত্মক ঘটনার অভিযোগের মধ্যে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হলো পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্বের ভোট। নির্বাচন কমিশনের আশ্বাস ছিল, বীরভূম, হুগলি ইত্যাদি জেলার উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন। কিন্তু বেলা ১১টা থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে বুথ দখলের অভিযোগ উঠতে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি ও হাওড়ার মোট নয়টি লোকসভা আসনে ভোট গ্রহণ হয় গতকাল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ নির্বাচন কমিশনের সূত্রে পাওয়া হিসাবে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের মতোই দক্ষিণবঙ্গেও ভোটের হার বিপুল। ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই বিকেল পাঁচটার মধ্যে বেশির ভাগ জায়গায় ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে ভোটারদের প্রায় সব জায়গাতেই অনেকক্ষণ বুথের সামনে লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কয়েক ঘণ্টা ভোট চলার পরই বীরভূম জেলার বোলপুর ও বীরভূম কেন্দ্র, হুগলির আরামবাগ এবং বর্ধমান জেলার বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র থেকে বুথ দখলের অভিযোগ আসতে থাকে। অভিযোগের তির বেশির ভাগটাই রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে।

গতকাল যে চার জেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে দক্ষিণবঙ্গের অন্য সব জেলার মতোই তৃণমূল কংগ্রেসের আধিপত্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এবার ভোট পর্বের মধ্যেই সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের জড়িত থাকার কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করায় দলের সর্বোচ্চ স্তরের নেতারাও বেশ অস্বস্তিতে পড়েন। এর সঙ্গে বিজেপির বেড়ে চলা উপস্থিতি এবং নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সারদা কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলায় তাঁদের সেই অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেস কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বুধবার ব্যাপক হারে বুথ দখল করে তাদের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে চাইবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু দেখছে না রাজনৈতিক মহল।

 ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোটে কারচুপি করার পদ্ধতিটা মোটামুটি সব জেলাতেই এক। প্রথমেই বিরোধী দলগুলোর এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। কেউ বেরোতে না চাইলে মারধর করা হয়। এরপর ভোটারদের বুথের পথে পা ফেলতে নিষেধ করা হয় এবং নিষেধাজ্ঞা না মানলে তার পরিণতি কী হবে, সেটাও ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী থাকলে এসব এতটা খোলাখুলি করা হয় না। আর যেসব জায়গায় বিরোধী এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়ার পরেও ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হয়, সেখানে দলীয় নেতারা বুথে উপস্থিত থেকে নজর রাখেন ভোটদাতারা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) তাঁদের নির্দেশিত দলীয় প্রতীকের পাশের বোতামটিই টিপছেন কি না।

বর্ধমানের কেতুগ্রামে গ্রামবাসী বুথ দখলে তৃণমূল কর্মীদের বাধা দিলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে গ্রামছাড়া করে বলে অভিযোগ এসেছে। হাওড়া জেলার আমতার নামের একটি গ্রামের স্কুলে দুটি বুথে মোট ৬৮০ জন ভোটার। সেখানে সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে নয়টার মধ্যেই সবার ভোট দেওয়া হয়ে যায় বলে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।

কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বহু জায়গাতেই টহল দিতে দেখা যায়নি। বাম নেতারা গতকাল বিকেলে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে গিয়ে বীরভূমসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বুথ দখল, সন্ত্রাস ও কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন। তাঁরা অনেক কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীর কুমার রাকেশ বিকেলে স্বীকার করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী যতটা সম্ভব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সবই ভোটকেন্দ্রের মধ্যে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে বেশি কিছু করা যায়নি। তবে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ, তা মানতে চাননি রাকেশ।

বুথ দখলের অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যসহ অনেকেই। তাঁদের ক্ষোভ, নির্বাচন কমিশনের উদাসীনতার সুযোগে এগুলো হয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতা শমীক ভট্টাচার্য ও রীতেশ তেওয়ারি মনে করেন, সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকার খবর প্রকাশ্যে আসায় ঘাবড়ে গিয়ে তৃণমূল হিংসার পথ বেছে নিল। তবে তা সত্ত্বেও বিজেপি নেতাদের আশা, এতে ফলের বিশেষ তারতম্য হবে না। অন্যদিকে তৃণমূল নেতারা ভোটের গতিপ্রকৃতি দেখে স্পষ্টতই খুশি। তবে তাঁরা মমতা কিছু বলার আগে এখনই প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইছেন না।

No comments: