Custom Search

Sunday, May 4, 2014

লাগলে রিং দিয়েন by এসএ সোহেল @মানবজমিন

অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের দিয়ে রূপগঞ্জে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। ১০-১২ বছরের কিশোররা এখন মাদক বিক্রেতাদের সেলসম্যান। অল্প বয়সী সেলসম্যানরা মাদকসেবীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। ভাই, আমার কাছে আম (ফেন্সিডিল) আর মুরুব্বি (ইয়াবা) আছে। লাগলে রিং (ফোন) দিয়েন'- এক কিশোর তার পরিচিত এক তরুণকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলছিল। তার খোলামেলা এ কথা শুনেই যেন ভয় পেয়ে গেল ওই তরুণ। রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় সম্প্রতি এ ঘটনাটি ঘটে। এর একদিন আগে এ এলাকায় এক বাড়িতে আকস্মিক হানা দেয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা সেবনরত তরুণরা পালিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়া মাত্রই আবারও সেখানে ইয়াবা সেবনের উৎসব শুরু হয়। রূপগঞ্জের মাদকের ভয়াবহতার সামান্য চিত্র এটি। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩ শতাধিক স্পটে মাদকের ব্যবসা চলছে। এসব স্পটে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায় আশঙ্কাজনকভাবে জড়িয়ে পড়ছে শিশু, নারী ও কিশোররা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই মাদক বেচাকেনায় তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এসব শিশু, নারী ও কিশোর মাদক বহন করতে গিয়ে একসময় নিজেরাই হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক ব্যবসায় জড়িত চুনোপুঁটিদের অনেক সময় আটক করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে রাঘববোয়ালরা। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ, ভোলাবো ফাঁড়ি পুলিশ, কাঞ্চন ফাঁড়ি পুলিশ, ভূলতা ফাঁড়ি পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কিছু অসাধু সদস্যের বিশেষ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। নোয়াপাড়া, ইছাপুরা, ছনি, বারিয়ারটেক, হারারবাড়ি, বাগবেড়, মঙ্গলখালী, চনপাড়া বস্তি, পূর্বগ্রাম, পিতলগঞ্জ, চনপাড়া গ্রাম, মাছিমপুর, কাঞ্চন, ভূলতা, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, কেন্দুয়া, রূপসী, খাদুন, মৈকুলী, রূপসী কাজীপাড়া, পবনকুল, বরাব, যাত্রামুড়া, দীঘিবরাব, গন্ধর্বপুর, দড়িকান্দি, গঙ্গানগর, বানিয়াদি, হাটাব, কালাদি, আতলাপুর, শিংলাবো, আমলাবো, পাঁচাইখা, মাসুমাবাদ, মর্তুজাবাদ, বিশ্বরোড খালপাড়, বড়ালু, ইছাখালী, নগরপাড়া, নাওড়া, দড়িকান্দি, লাভরাপাড়াসহ ৩ শতাধিক স্পট মাদক কেনাবেচা ও সেবনের চিহ্নিত পয়েন্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন রুটে বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান প্রবেশ করছে। আর এসব মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করে তিন শতাধিক ব্যবসায়ী। কয়েক যুগ ধরে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন সাম্রাজ্য। তাদের সাম্রাজ্যে প্রতিদিনই নাম লেখাচ্ছে নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী। এসব স্পটে মাদক বেচার জন্য ব্যবসায়ীদের বেতনভুক্ত কর্মীও রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব স্পটে কেনাবেচা চলছে মাদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানান, থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র‌্যাব কয়েকটি স্পটে সমপ্রতি অভিযান চালিয়ে কয়েকজন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করলেও বন্ধ হয়নি মাদক ব্যবসা। বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনকারীর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত যুবকরা এসে যোগ দিচ্ছে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায়। প্রতিদিন নিত্যনতুন কৌশলের মাধ্যমে অভিনব কায়দায় মাদক ব্যবসায়ীরা এই অবৈধ ব্যবসা জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে গাঁজা, ফেনসিডিল, হিরোইন, ইয়াবাসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য সড়ক পথে বিভিন্ন যানবাহনে রূপগঞ্জ উপজেলায় চলে আসছে। মাদক বিক্রেতারা তাদের শরীরে মাদক বহন করে বিক্রি করে বেড়ায়। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মীর বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। পুলিশ মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছে। সবার সহযোগিতায় এলাকা মাদকমুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

No comments: