Custom Search

Tuesday, April 29, 2014

অপহরণ চলছেই- প্রধানমন্ত্রী কি দেশের ‘এসওএস’ বার্তা শুনছেন?

অপহরণ এখন প্রতিদিনের নয়, প্রায় প্রতি ঘণ্টার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অপহূত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যাগণনা চলছে, কিন্তু প্রতিকার মিলছে না। অপহূত ব্যক্তিদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু কারা প্রতিদিন অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েও 'অদৃশ্য' থেকে যাচ্ছে, তার উত্তর মিলছে না। এই ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে সরকার-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বিকার।
গত রোববার নারায়ণগঞ্জে দিনদুপুরে কাউন্সিলরসহ পাঁচজন অপহরণের সংবাদ বাসি হতে না হতেই গতকাল সোমবার ভোরে কালিয়াকৈরে অপহূত হলেন দুই ভাই। রোববার ভোরে টেকনাফে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন দুই ব্যক্তি। বছরের শুরু থেকে গড়ে প্রতিদিন একটি করে অপহরণের ঘটনা ঘটলেও সরকারের আচরণে উদ্বেগের লক্ষণ নেই।
আলোচিত অপহরণের মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণী ও পেশার নাগরিক রয়েছেন। সম্প্রতি পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী অপহূত হলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের তোড়জোড়ের মধ্যে তাঁকে ফেরত পাওয়া যায়। প্রশ্ন ওঠে, অন্যান্য অপহরণের ব্যাপারে সরকার দৃঢ়তা দেখাল না কেন? এ প্রেক্ষাপটেই নারায়ণগঞ্জের পাঁচ অপহূতের পরিবার তাদের স্বজনদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে। প্রধানমন্ত্রীকেই যদি এ ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হতে হয়, তাহলে পুলিশ-প্রশাসনের কাজ কী, তা জানতে হবে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ২৬৮ জন অপহূত হন। এর মধ্যে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৪৩ জনের। অপহরণের পর ছেড়ে দেওয়া হয় ২৪ জনকে। পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় ১৪ জনকে। কিন্তু ১৮৭ জনের কোনো খোঁজই নেই। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অপহরণ ও ক্রসফায়ারের সংখ্যা কমে আসে। এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই বছর এই সংখ্যা গত বিএনপি আমলের পর্যায়ে উঠে বেড়ে হয় ২২৯। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অপহরণের মামলা হয়েছে তিন হাজার ৩৯১টি। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৮৭০টি, ২০১১ সালে
৭৯২টি, ২০১২ সালে ৮৫০টি ও ২০১৩ সালে ৮৭৯টি অপহরণের ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অপহরণের ঘটনা ঘটে ১৯৬টি।
বেশ কিছু অপহরণের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক সময় পেশাদার অপরাধীরা অপরাধ সংঘটনে পুলিশ ও র‌্যাবের নাম ও পোশাক ব্যবহার করে থাকে। এ পরিস্থিতিতে জনগণ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। আইন, বিচার ও প্রশাসনের প্রতি আস্থা ধরে রাখা, জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার আশ্বাস বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে সরকারকে সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে।
আলাদা আলাদা অপহরণের ঘটনায় নয়, বরং অপহরণের দক্ষযজ্ঞ স্থায়ীভাবে বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর জোরালো উদ্যোগ আশা করি। আজকের মুহূর্তে এটাই দেশের শীর্ষ অভিভাবকের কাছে জাতির এসওএস (আমাদের প্রাণ বাঁচাও) বার্তা।

No comments: